ব্ল্যাকহোল শব্দটি দ্বারা কিন্তু কোন গর্ত বোঝায় না। ব্ল্যাকহোল এমন একটি জায়গা যেখানে খুবই অল্প জায়গায় অনেক অনেক ভর ঘনীভূত হয়ে রয়েছে। এতই বেশী যে, কোন কিছুই এর কাছ থেকে রক্ষা পায় না এমনকি সর্বোচ্চ গতি সম্পন্ন আলোও নয়!
মহাকাশের এক অনন্ত বিস্ময় এই ব্ল্যাকহোল। ব্ল্যাকহোলকে কৃষ্ণবিবর, কৃষ্ণগহ্বর ইত্যাদি বলা হয়। জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি অনুসারে, কৃষ্ণগহ্বর মহাকাশের এমন একটি বিশেষ স্থান যেখান থেকে কোন কিছু, এমনকি আলো পর্যন্ত বের হয়ে আসতে পারে না। মহাকাশীয় এই দানবের কাছে পথ হারায় আলোকতরঙ্গ। ব্ল্যাকহোলের ধারণা নিয়ে আমাদের অনেকের মধ্যেই একটা ধোঁয়াশা কাজ করে। হয়তো ভালোভাবে জানার সুযোগ হয় না কিংবা শেষমেষ নিজেদের এই বলে সান্ত্বনা দেই যে, জগতে এমন অনেক কিছুই আছে যা আমাদের জানার দরকার নেই।
কিন্তু না, অজানা সবকিছুই জানার আগ্রহ থাকতে হবে এবং জানতে হবে। আসলেই তো! কী এই ব্ল্যাকহোল? ব্ল্যাকহোলের রহস্যই বা কী? চলো তবে, আজকের লেখাটি পড়ে জেনে নেয়া যাক, মহাবিশ্বের এই ব্ল্যাকহোলের রহস্য!
ব্ল্যাকহোল কি?
মহাবিশ্বের এমন কিছু তারকা বা নক্ষত্র আছে, যারা এমন শক্তিশালী মহাকর্ষ বল তৈরি করে যে এটি তার কাছাকাছি চলে আসা যেকোন বস্তুকে একেবারে টেনে নিয়ে যায়, হোক তা কোন গ্রহ, ধুমকেতু বা স্পেসক্রাফট, তা-ই ব্ল্যাক হোল। পদার্থবিজ্ঞানী জন হুইলার এর নাম দেন ‘ব্ল্যাক হোল’।
এই তারকাদের অস্বাভাবিক আকার, ভর ও ঘনত্ব থাকে, আর এর জন্যে এই সব তারকা থেকে নির্গত আলো বাইরে আসতে পারে না। সহজ ভাষায় বলতে গেলে- যখন একটি তারকার জীবনকাল শেষ হয়ে যায়, সেই মুহূর্তে তার অভিকর্ষ শক্তি এতই প্রবল হয় যে আলো ওখান থেকে বের হতে পারে না। আর এই ঘটনা তখনই ঘটে যখন একটি তারকার জীবনকাল অর্থাৎ তার নির্দিষ্ট জ্বালানি শেষ হয়ে যায়। তারকাটি পরিণত হয় ব্ল্যাকহোলে। এভাবেই একটি ব্ল্যাকহোলের সৃষ্টি হয়।
ব্ল্যাকহোল-এর জন্ম কিভাবে?
কৃষ্ণগহ্বরের জন্ম ইতিহাস অনেকটা কবিতার মতো। একটি তারার মৃত্যু থেকে জন্ম নেয় একটি কৃষ্ণগহ্বর। বিজ্ঞানীদের মতে- সব চেয়ে ছোট ব্ল্যাকহোলটির জন্ম ঠিক এই মহাবিশ্বের জন্মের সময়। একটি নক্ষত্রের নির্দিষ্ট জ্বালানি নিঃশেষ হয়ে গেলে এর মৃত্যু ঘটে। যতক্ষণ পর্যন্ত এর অভ্যন্তরীণ হাইড্রোজেন গ্যাস অবশিষ্ট থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত এর ভিতরে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া চলতে থাকে। হাইড্রোজেন শেষ হয়ে গেলে এর কেন্দ্রীয় মূলবস্তু সংকুচিত হতে থাকে। এভাবে একটি তারার মৃত্যু হয়।
ব্ল্যাকহোলে রয়েছে শক্তিশালী মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র। প্রত্যেক ব্ল্যাকহোলের চারদিকে একটি সীমা আছে যেখানে একবার ঢুকলে আর বের হওয়া যায় না। এইভাবেই মহাকাশের মহাবিস্ময় হয়ে বেঁচে আছে ব্ল্যাকহোল। একে নিয়েই চলছে বিজ্ঞানের নিরন্তর চর্চা। আলোকে গিলে খাওয়া এই মহাকাশীয় দানবকে নিয়ে তাই আজও কৌতূহলের শেষ নেই।
কতো বড় এই ব্ল্যাকহোল?
ব্ল্যাকহোল ছোট হতে পারে আবার বড়ও হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে ক্ষুদ্রতম ব্ল্যাকহোল একটি পরমাণুর সমান হতে পারে। এই জাতীয় ব্ল্যাকহোলগুলো অনেক ক্ষুদ্র কিন্তু তাদের এক একটার ভর হতে পারে বিশাল কোন পর্বতের সমান। অন্য এক ধরনের ব্ল্যাকহোলকে বলা হয় “স্টেলার” বা “নাক্ষত্রিক”। এর ভর আমাদের সূর্যের ভর এর চেয়েও ২০ গুণ বেশি হতে পারে।
খুব সম্ভবত অনেক অনেক বেশি ভরেরও নক্ষত্র রয়েছে পৃথিবীর ছায়াপথে। আর পৃথিবীর এই ছায়াপথকে বলা হয় “মিল্কিওয়ে”। সবচেয়ে বৃহৎ ব্ল্যাকহোলকে বলা হয় “সুপারমেসিভ”। কৃষ্ণবিবরকে ভাগ করা হয় তার মাঝে থাকা ভর, আধান, কৌণিক ভরবেগের উপর ভিত্তি করে।
ভরের উপর ভিত্তি করে কৃষ্ণবিবর চার ধরনের। যেমন-
১. SUPER MASSIVE BLACKHOLE (সুপার মেসিভ ব্ল্যাকহোল)
ব্ল্যাক হোল যদি ব্ল্যাক অর্থাৎ কালো হয়, তাহলে বিজ্ঞানীরা কিভাবে তা দেখতে পান?
সাধারণভাবে, একটি ব্ল্যাকহোলকে দেখা প্রায় অসম্ভব। কারণ এর অতি শক্তিশালী অভিকর্ষীয় শক্তির সবটুকু আলোর কেন্দ্রের দিকে টানে। কিন্তু এর আশেপাশের তারকা এবং গ্যাস কীভাবে এর দ্বারা প্রভাবিত হয় বা হচ্ছে বিজ্ঞানীরা এটা দেখতে পারেন। যেসব তারকারা ব্ল্যাকহোলকে ঘিরে উড্ডয়মান অথবা ঘূর্ণায়মান, গবেষকরা সেই সব তারকাদের উপর স্টাডি করতে পারেন।
এখন আসি মূল কথায় অর্থাৎ এবারের খুজে পাওয়া আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের ব্ল্যাক হোল (Sagittarius A) কে নিয়ে
বিজ্ঞানীরা ২০১৭ সাল থেকেই এই Black Hole এর ছবি তোলার অবিরত চেস্টা করে যাচ্ছিলো, এবারে সক্ষম হলো তারা।
কিন্তু কিভাবে এর ছবি তোলা হলো?
ব্যপারটা হলো ব্ল্যাক হোল থেকে আলো কখনো বেরোয় না। তাহলে কিভাবে সে ছবি আমরা পাই?
মূলত ব্ল্যাক হোলটির আশে পাশে থাকা গ্যাসের উজ্জ্বলতা ও বাইনারি তারাদের চলনের গতি পর্যবেক্ষণ করে এই ব্ল্যাক হোলটির অস্তিত্ব খুজে বের করা হয়েছে। এখন ব্ল্যাক হোলের আশেপাশে যেসব আলো গুলোকে চিহ্নিত করা হয়, সেগুলো সবই ব্ল্যাক হোলের Event Horizon নামক চাকতির (যা মূলত ব্ল্যাকহোলের চারপাশে ধেয়ে আছে) মধ্যেই ঘোরাফেরা করছিলো সেই আলোর বিশ্লেষণ এর মাধ্যমেই মূলত এই ব্ল্যাক হোলটির একটি অসাধারণ ছবি ক্যাপচার করা গিয়েছে।
ঘূর্নণের ওপর ভিত্তি করে ব্ল্যাক হোল কে প্রধানত ২ ভাগে ভাগ করা যায়।
১/ Schwazchild Black Hole( অঘূর্ণায়মান ব্ল্যাক হোল)
২/ Kerr- Newman বা ঘূর্ণায়মান ব্ল্যাক হোল
মহাবিশ্বের বেশির ভাগ ব্ল্যাক হোলই ঘূর্ণায়মান ব্ল্যাক হোল।
আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে যে ব্ল্যাক হোল পাওয়া গেছে তাও মূলত ঘূর্ণায়মান ব্ল্যাক হোলের তালিকায় পড়ে।
আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে যে ব্ল্যাক হোল এর ছবিটি পাওয়া গেছে তা সূর্যের চাইতে কমপক্ষে চার কোটি গুণ ভারী
কিন্তু এতে পৃথিবীর তেমন কোনে ক্ষতি হবেনা কারণ এই ব্ল্যাক হোল আমাদের থেকে প্রায় ২৭০০০ আলোক বর্ষ দূরে অবস্থান করছে।
এই ছবিটি তুলতে পাওয়া টা যে কতোটা দূষ্কর তা আসলে বলার বাহিরে।
এই Event Horizon Telescope টি প্রায় ৮টি radio Observatory Telescope এর সমন্বয় করে তৈরি করা, যা বিশ্বের কতোগুলো দেশের বিজ্ঞানী দের সমন্বিত চেস্টার ফসল।
মূলত এসব আসলে আমাদের মতো ছোট মাথায় ঢুকবেনা
এসব ছবিগুলো তোলার জন্য ইনফ্রারেড রে এর ইউজ করা হয়েছে।
কারণ নরমাল রে এর কাজ যেখানে শেষ ইনফ্রারেড এর কাজ সেখান থেকে শুরু।
এখন দেখার বিষয় হলো এই যে বিজ্ঞানী দের এখন মূল টার্গেট এই ব্ল্যাকহোলের আশেপাশের ম্যাগনেটিক জোন, কসমিক ফ্লেয়ার গুলো কিভাবে কি কাজ করছে তার ব্যাখ্যা খুজে বের করা।