বিসিএস লিখিত প্রস্তুতি গ্রন্থ বা পুস্তক সমালোচনা (কারাগারের রোজনামচা – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান)

কারাগারের রোজনামচা

বিসিএস লিখিত প্রস্তুতি গ্রন্থ বা পুস্তক সমালোচনা (কারাগারের রোজনামচা – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান)
BCS Written Preparation Book Criticism Karagarer Rojnamcha by Sheikh Mujibur Rahman

পুস্তক পরিচিতিঃ 
কারাগারের রোজনামচা

লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান
প্রথম প্রকাশঃ ১৭ মার্চ ২০১৭
প্রচ্ছদঃ তারিক সুজাত (বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি – শিল্পী রাসেল কান্তি দাস)
পৃষ্ঠাঃ ৩৩২
ধরণঃ আত্মজীবনী
বিষয়ঃ ইতিহাস, রাজনীতি
প্রকাশকঃ বাংলা একাডেমী
আইএসবিএনঃ ৯৮৪-০৭-৫৬১৭-৬

‘এতটা বছর বুকে আগলে রেখেছি যে অমূল্য সম্পদ-আজ তা তুলে দিলাম বাংলার জনগণের হাতে।’
পিতার স্মৃতি বিজড়িত ডায়েরির মাঝে যে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার মন আবেগে ঘনঘটা তা এভাবেই সরল ভঙ্গিমায় ফুটে উতেছে “কারাগারের রোজনামচা” গ্রন্থের ভূমিকায়। গ্রন্থের নামকরণ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহেনা।
১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ছয় দফা উত্থাপনের পর ওই বছরের প্রথম তিন মাসে আটবার গ্রেফতার ও জামিন পান বঙ্গবন্ধু। এরপর মে মাসে আবার গ্রেপ্তার হন। ওই সময়ের বন্দিজীবনের দিনলিপি উঠে এসেছে বইটিতে।

কারাগারের রোজনামচা – গ্রন্থটির নামকরণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা। ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত ঘটনাবহুল জেল-জীবনচিত্র এ গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জেল-জীবন, জেল-যন্ত্রণা, কয়েদীদের অজানা কথা, অপরাধীদের কথা, কেন তারা এই অপরাধ জগতে পা দিয়েছিলো সেসব বিষয় যেমন সন্নিবেশিত হয়েছে; ঠিক তেমনি তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি, কারাগারে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের দুঃখ-দুর্দশা, গণমাধ্যমের অবস্থা, শাসক গোষ্ঠীর নির্মম নির্যাতন, ৬ দফার আবেগকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা, ষড়যন্ত্র, বিশ্বাস ঘাতকতা, প্রকৃতি প্রেম, পিতৃ-মাতৃ ভক্তি, কারাগারে পাগলদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না সংবেদনশীলতার সাথে তুলে ধরেছেন।

দেশ ও জনগণের প্রয়োজনে যে রাজনীতি; সেই রাজনীতিতে দ্বিচারিতা চলেনা, কপটতা চলে না। ব্যক্তি স্বার্থের চেয়েও সেখানে দেশ ও জনগণের স্বার্থই বড়। বঙ্গবন্ধু দেশ ও জনগণের স্বার্থেই রাজনীতি করেছেন।পূর্বজ রাজনীতিবিদদের মধ্যে দু’একজনের দেশ ও জনগণ-বিরোধী মনোভাব তাকে দারুণভাবে আহত করেছে। সে সম্পর্কেও তিনি সেই সত্যটি তুলে ধরতে দ্বিধা করেননি :

“মওলানা সাহেবকে আমি জানি, কারণ তিনিই আমার কাছে অনেকবার অনেক প্রস্তাব করেছেন। এমন কি ন্যাপ দলে যোগদান করেও। সেসব আমি বলতে চাই না। তবে ‘সংবাদে’র সম্পাদক জহুর হোসেন চৌধুরী সাহেব জানেন। এসব কথা বলতে জহুর ভাই তাঁকে নিষেধও করেছিলেন। মওলানা সাহেব পাকিস্তানে যেয়ে এক কথা বলেন, আর পূর্ব বাংলায় এসে অন্য কথা বলেন। যে লোকের যে মতবাদ সেই লোকের কাছে সেই ভাবেই কথা বলেন। আমার চেয়ে কেউ তাঁকে বেশি জানে না। তবে রাজনীতি করতে হলে নীতি থাকতে হয়। সত্য কথা বলার সাহস থাকতে হয়। বুকে আর মুখে আলাদা না হওয়াই উচিত।” (পৃষ্ঠা: ৫৭-৫৮, ২রা জুন ১৯৬৬, বৃহস্পতিবার)

বাঙালি চরিত্র বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বাঙালিকে যেমন বীরের জাত বলেছেন, ঠিক তেমনি বাঙালি যে ‘পরশ্রীকাতর ‘ সেটিও বলতে ভুলেননি। বাঙালিরা অন্যের দুঃখে ব্যথিত হয়, আবার এই বাঙালিই যে অন্যের ভালো দেখতে পারে না, সেটিও উল্লেখ করেছেন তাঁর দিনলিপিতে। আবার সবসময়ই কিছু বাঙালি ছিল বিশ্বাসঘাতক। বাংলার স্বাধীন রাজা দাউদ কারানী থেকে সিরাজউদ্দৌলা ; সবসময়ই বাঙালিরা নিজেদের অস্তিত্ব ভুলে নিজেদের ক্ষতি করেছে, ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার নিমিত্তে ভিনদেশীদের সাথে হাত মিলিয়েছিল। সেই সত্যটি বঙ্গবন্ধু লিখেছেন এইভাবে :
“বাংলাদেশ শুধু কিছু বেঈমান ও বিশ্বাসঘাতকদের জন্যই সারাজীবন দুঃখ ভোগ করলো। আমরা সাধারণত মীর জাফর আলি খাঁর কথাই বলে থাকি। কিন্তু এর পূর্বেও ১৫৭৬ সালে বাংলার স্বাধীন রাজা ছিল দাউদ কারানী।

পাকিস্তান হওয়ার পরেও দালালি করার লোকের অভাব হল না- যারা সবকিছুই পশ্চিম পাকিস্তানে দিয়ে দিচ্ছে সামান্য লোভে। বাংলার স্বার্থরক্ষার জন্য যারা সংগ্রাম করছে তাদের বুকে গুলি করতে বা কারাগারে বন্দি করতে এই দেশে সেই বিশ্বাসঘাতকদের অভাব হয় নাই।
এই সুজলা-সুফলা বাংলাদেশ এতো উর্বর; এখানে যেমন সোনার ফসল হয়, আবার পরগাছা আর আগাছাও বেশি জন্মে। জানি না বিশ্বাসঘাতকদের হাত থেকে এই সোনার দেশকে বাঁচানো যাবে কিনা!”

( পৃষ্ঠা: ১১১-১১২, ২০শে জুন ১৯৬৬, সোমবার)
একদিকে ৬৬ সালের ভয়াবহ বন্যা। চাউলের দাম ৪০-৫০ টাকা মণ। জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বী। বাংলার জনগণের মনে শান্তি নাই। অন্যদিকে ৬ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সারাদেশের মানুষ সোচ্চার, তখন চলছে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর নির্মম নির্যাতন। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ কেউই রক্ষা পাচ্ছে না পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর হাত থেকে। ইত্তেফাক প্রেস বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে। জাতির সেই সংকট কালে কিছু মানুষকে বঙ্গবন্ধু দেখেছেন বাঙালি জাতির সাথে বেঈমানি করতে।

যাদেরকে বঙ্গবন্ধু ‘আগাছা-পরগাছার’ সাথে তুলনা করেছেন। কেননা বাঙালি হয়েও তারা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর তাঁবেদারি করেছে। এজন্যই বঙ্গবন্ধু বলেছেন:
“………..চমৎকার লাগে, যেই আসে আমার বাগানের দিকে একবার না তাকিয়ে যেতে পারে না।
বাজে গাছগুলো আমি নিজেই তুলে ফেলি। আগাছাগুলিকে আমার বড় ভয়, এগুলি না তুললে আসল গাছগুলি ধ্বংস হয়ে যাবে। যেমন আমাদের দেশের পরগাছা রাজনীতিবিদ- যারা সত্যিকারের দেশপ্রেমিক তাদের ধ্বংস করে, এবং করতে চেষ্টা করে। তাই পরগাছাকে আমার বড় ভয়।……………..”


(পৃষ্ঠা: ১১৭, ২৩ জুন ১৯৬৬, বৃহস্পতিবার)

বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব যখন জেলগেটে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে আসতেন, তখন একটু বেশী করে বিভিন্ন পদের খাবার বঙ্গবন্ধুর জন্য নিয়ে আসতেন। বঙ্গবন্ধু সেই খাবার শুধু নিজেই খেতেন না, অন্যান্য কয়েদীদেরকে সেসব খাবার বণ্টন করে দিতেন। তিনি সারা জীবন মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখেছেন। মাঝে মাঝে তিনি নিজে না খেয়েও অন্য কয়েদিদের নিজের খাবার খেতে দিয়েছেন। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর শাসন আমলে ধনী-গরীবের ব্যবধান এত চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল তা বঙ্গবন্ধু তার লেখায় উল্লেখ করেছেন:

“আমি যাহা খাই ওদের না দিয়ে খাই না। আমার বাড়িতেও একই নিয়ম। জেলখানায় আমার জন্য কাজ করবে, আমার জন্য পাক করবে, আমার সাথে এক পাক হবে না!

ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন। আওয়ামী লীগের জন্মেরও এক বছর আগে বঙ্গবন্ধু এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। জন্মলগ্ন থেকেই এই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে এই মাটির জন্য, এই দেশের জন্য যত ত্যাগ স্বীকার করেছে; তা আর অন্য কোন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এতটা করেনি। তাই এই সংগঠনের প্রতি বঙ্গবন্ধুর দরদ, আবেগ, ভালবাসা ছিল অকৃত্রিম। ১৯৬৭ সালের ১৮ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ২য় মামলার সওয়াল-জবাব অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর আত্নীয়-স্বজন ছাড়া সেখানে ছাত্রলীগের অন্যতম নেতা ‘রেজা’ও উপস্থিত হন। এর আগে বঙ্গবন্ধু শুনেছেন ছাত্রলীগের নির্বাচন নিয়ে নিজেদের মধ্যে গোলমাল চলছে। বঙ্গবন্ধু বলেছেন :

“তোমরা প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করিও। ছাত্রলীগকে ভেঙে ফেলে দিও না। ………………… এই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গোলমাল হলে আমার বুকে খুব আঘাত লাগে।” (পৃষ্ঠা: ২১১, ১৮ মার্চ ১৯৬৭, শনিবার)


নিজের সন্তান, নিজের স্ত্রী, পরিবার-পরিজন, বাবা-মা সবকিছু ফেলে দেশের জন্য, দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য যিনি কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠকে বেছে নিতে পারেন, তিনিই তো নেতা, তিনিই তো জাতির পিতা। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ রেখে একজন বন্দি পিতার আকুতি আমরা শুনতে পাই :
“৮ ফেব্রুয়ারি ২ বৎসরের ছেলেটা এসে বলে, “আব্বা বালি চলো”। কি উত্তর ওকে আমি দিব। ওকে ভোলাতে চেষ্টা করলাম, ও তো বোঝে না আমি কারাবন্দী। ওকে বললাম,”তোমার মার বাড়ি তুমি যাও। আমি আমার বাড়ি থাকি। আবার আমাকে দেখতে এসো।” ও কি বুঝতে চায়!…

ভাগ্য বিড়ম্বিত বাঙালি অনাহারে থাকে, বাংলার মানুষের মুখে হাসি নাই, পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর নির্মম নির্যাতন; সেই ক্রান্তিকালকে মোকাবেলা করে বাঙালির মুখে হাসি ফোটানোই ছিল তার একমাত্র ব্রত। তাইতো তিনি নিজের জন্মদিনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে বলেছেন:
“আমি একজন মানুষ, আর আমার আবার জন্মদিবস!”
(পৃষ্ঠা: ২০৯; ১৭ই মার্চ ১৯৬৭, শুক্রবার)

একদিকে দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য ৬ দফা আন্দোলনকে তরান্বিত করা, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিদারুণ জেল-জীবন, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শাসন ও শোষণ; অন্যদিকে নিজের স্ত্রী, পরিবার, সন্তান-সন্ততি আর অসুস্থ বাবা-মা। নিজের পরিবারের অর্থকষ্ট ফুটে উঠেছে তাঁর লেখায়। মহীয়সী নারী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের আত্নত্যাগের কথা বলতেও বঙ্গবন্ধু ভুলেন নি:

অর্থকষ্টের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হওয়ার সময় বঙ্গবন্ধু যখন উনার সহধর্মিণীর সাথে আলোচনা করছিলেন সম্ভাব্য কি করা যায়, তখন তাদের মাঝের আলাপচারিতা –
‘’আমার যথেষ্ট বন্ধু আছে যারা কিছু টাকা ধার দিতে কৃপণতা করবে না’ ‘ যদি বেশী অসুবিধা হয় নিজের বাড়ি ভাড়া দিয়ে ছোট বাড়ি একটা ভাড়া করে নিব’, রেণু বলল।‘’ ( পৃষ্ঠা: ২২২ ; ১৪ই এপ্রিল – ১৫ই এপ্রিল, ১৯৬৭)
কারাগারের রোজনামচা গ্রন্থটি ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৮ সালের দিনলিপি হলেও ; তিনি কখনো ফিরে গেছেন ভাষা আন্দোলনের প্রারম্ভিক পর্যায়ে, কখনোবা রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে গড়ে ওঠা সেই মহৎ সংগ্রামে। বর্ণনা করেছেন সেই সময়কার সংগ্রামে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের বীরত্বব্যঞ্জক ভূমিকার কথা। ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৭, দিনলিপিতে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন :-

“ভাষা আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের দান সবচেয়ে বেশি। …আওয়ামী লীগ যখন ১৯৫৬ সালে ক্ষমতায় বসল তখন ২১শে ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ দিবস’ ও সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করল।”
(পৃষ্ঠা: ২০৬-২০৭)

সমাজের শ্রেনীবৈষম্য, উঁচু তলার মানুষের নিচতলার মানুষদেরকে শোষণ করার মানসিকতা কিভাবে একজন সাধারণ মানুষকে মস্ত বড় চোরে পরিণত করে, বঙ্গবন্ধু তা ‘লুদু চোরে’র জীবনের বাস্তবমুখী ঘটনা তুলে ধরে একজন মানুষের ‘চোর’ হয়ে ওঠার নিগূঢ় সত্যকে উঠিয়ে এনেছেন। একজন মহান, মানবিক নেতার সংস্পর্শে এসে একজন কুখ্যাত ‘লুদু চোর’ কিভাবে জীবনের ইতিবাচক পরিবর্তন এনে আলোর পথে যাত্রা শুরু করে, সে সত্যটিও গ্রন্থটিতে সন্নিবেশিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সংস্পর্শে না আসলে লুদু চোর চোরই থেকে যেত। সারাজীবনটি হয়তো কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে থাকা লাগতো। লুদু চোরকেই বলতে শুনেছি, ” আর পকেট মারবো না, ভালোভাবে থাকবো।”

গ্রন্থটির প্রত্যেকটি দিনলিপিতে বাংলা বা বাঙালিত্বের প্রতি বঙ্গবন্ধুর যে ভালবাসা, তা ফুটে উঠেছে চমৎকারভাবে। ব্যক্তিকে ছাপিয়ে সমষ্টির জন্য তাঁর যে ক্রন্দন- তাও ফুটে উঠেছে প্রত্যেকটি লাইনে। “সত্য” কঠিন জেনেও সেই কঠিনকে ভালবেসে ‘সত্য’কে নির্মোহ ভাবেই তুলে ধরেছেন তিনি। গ্রন্থটির প্রতিটি দিনলিপির শেষে লেখকের একাকীত্ব, নিঃসঙ্গতার নিদারুণ কষ্ট প্রকাশ পেয়েছে; কেননা, দিন শেষে সন্ধ্যা নামলেই তাঁর কক্ষে তালা লেগে যেত! সহৃদয় পাঠকও যেন তার জীবনের এই অংশ এসে অশ্রুসজল হয়ে পড়ে।

একটি তথ্যবিভ্রাটের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। তা হল বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেছেন ন্যাপ নেতা মশিহুর রহমানের (১৯২৪-১৯৭৯) কথা, যিনি ‘যাদু মিয়া’ নামে অধিক পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার কারণে স্বাধীনতার পর দালাল আইনে গ্রেপ্তার হন। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট এবং বিএনপিতে যোগ দেন। টিকা অংশে পরিচিতি দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা যশোরের মশিউর রহমান (১৯২০-১৯৭১)
বইটি বাংলার প্রতিটি মানুষের অবশ্যপাঠ্য। সে তুলনায় বইয়ের দাম গগনচুম্বী। বাংলাদেশের মত একটি দরিদ্র দেশে সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যে দাম নির্ধারণে এটি বিবেচনা করা যেতে পারতো। দরকার হলে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমেও বইটিকে সকলের নাগালের মাঝে নিয়ে আসতে সচেষ্ট মহল কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।

পরিশেষে, সরকার পরিচালনার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উদ্যোগ এক কথায় অনন্য সাধারণ ঘটনা। প্রকাশনার সঙ্গে থাকা বাংলা একাডেমিও প্রশংসার যোগ্য।

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Related posts

error: Content is protected !!