বিসিএস লিখিত পরীক্ষার ওরিয়েন্টেশন – অভিজ্ঞদের মতামত

বিসিএস লিখিত পরীক্ষার ওরিয়েন্টেশন – অভিজ্ঞদের মতামত

তিন পর্বের ধারাবাহিক বিসিএস পরীক্ষায় যারা প্রথম পর্ব পাস করলেন তাদের সবাইকে অন্তরের অন্তস্তল থেকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। এবার দ্বিতীয় পর্বের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার পালা আপনাদের। আমরা যখন স্কুল থেকে কলেজ বা কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করি তখন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় জিনিসটা কী, এখানে কী করা যাবে, কী করা যাবেনা, কিভাবে চলতে হবে, কী পড়তে হবে ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা দিতে কর্তৃপক্ষ ওরিয়েন্টেশনের ব্যবস্থা করে। ঠিক একই উদ্দেশ্যে প্রিলি উত্তীর্ণদের জন্য আমার এই ওরিয়েন্টেশন।

 

যারা প্রিলিমিনারী পরীক্ষার উত্তীর্ণ হবেন তারাই লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। আবেদন করার সময় আপনি যদি শুধু জেনারেল ক্যাডারে আবেদন করে থাকেন তাহলে আপনাকে মোট ৯০০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। ৯০০ নম্বরের মধ্যে সব বিষয় মিলিয়ে ৪৫০ নম্বর পেলেই আপনি ভাইভার জন্য নির্বাচিত হবেন। জেনারেল ক্যাডারে যে বিষয়গুলোর উপর পরীক্ষা দিতে হবে তা নিম্নরূপ।

১। বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র (১০০+১০০)= ২০০ নম্বর
২। ইংরেজী প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র (১০০+১০০)= ২০০ নম্বর
৩। বাংলাদেশ বিষয়াবলী প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র (১০০+১০০)= ২০০ নম্বর
৪। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী= ১০০ নম্বর
৫। গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা (৫০+৫০)= ১০০ নম্বর
৬। সাধারণ বিজ্ঞান= ১০০ নম্বর

 

উল্লেখ্য, প্রতিটি ২০০ নম্বরের পরীক্ষার সময় ৪ ঘণ্টা এবং প্রতিটি ১০০ নম্বরের পরীক্ষার সময় ৩ ঘণ্টা। প্রতিটি বিষয়ে পাশ নম্বর ৩০% অর্থাৎ আপনাকে ২০০ নম্বরের পরীক্ষায় ন্যূনতম ৬০ নম্বর এবং ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩০ নম্বর পেতে হবে। এখন কথা হলো, কেউ যদি কোন বিষয়ে ৩০% এর কম পান তাহলে তিনি কি ফেল করবেন? না, তিনি ফেল করবেন না। যে বিষয়ে তিনি ৩০% এর কম নম্বর পাবেন সেই বিষয়ের কোন নম্বর উনার মোট নম্বরের সাথে যোগ হবে না। মনে করুন, কোন পরীক্ষার্থী সাধারণ বিজ্ঞান পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে ২৯ নম্বর পেলেন, তাহলে উনার এই নম্বর বাকি পাঁচটা বিষয়ের মোট নম্বরের সাথে যোগ হবে না। ফলে সাধারণ বিজ্ঞানের এই ২৯ নম্বর বাদেই যদি পরীক্ষার্থী বাকি পাঁচটা বিষয়ে ন্যুনতম ৪৫০ নম্বর পান তাহলে তিনি ভাইভার জন্য নির্বাচিত হবেন।

 

আবেদন করার সময় আপনি যদি শুধু টেকনিক্যাল ক্যাডারে আবেদন করে থাকেন তাহলেও আপনাকে মোট ৯০০ নম্বরের পরীBCS Writtenক্ষায় অংশ নিতে হবে। ৯০০ নম্বরের মধ্যে সব বিষয় মিলিয়ে ৪৫০ নম্বর পেলেই আপনি ভাইভার জন্য নির্বাচিত হবেন। টেকনিক্যাল ক্যাডারে যে বিষয়গুলোর উপর পরীক্ষা দিতে হবে তা নিম্নরূপ।

১। বাংলা প্রথম পত্র= ১০০ নম্বর
২। ইংরেজী প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র (১০০+১০০)= ২০০ নম্বর
৩। বাংলাদেশ বিষয়াবলী প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র (১০০+১০০)= ২০০ নম্বর
৪। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী= ১০০ নম্বর
৫। গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা (৫০+৫০)= ১০০ নম্বর
৬। অনার্সে পঠিত বিষয়= ২০০ নম্বর

আবেদন করার সময় আপনি যদি জেনারেল ও টেকনিক্যাল উভয় (Both) ক্যাডারে আবেদন করে থাকেন তাহলে আপনাকে মোট ১১০০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। বোথ ক্যাডারে যে বিষয়গুলোর উপর পরীক্ষা দিতে হবে তা নিম্নরূপ।

১। বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র (১০০+১০০)= ২০০ নম্বর
২। ইংরেজী প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র (১০০+১০০)= ২০০ নম্বর
৩। বাংলাদেশ বিষয়াবলী প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র (১০০+১০০)= ২০০ নম্বর
৪। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী= ১০০ নম্বর
৫। গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা (৫০+৫০)= ১০০ নম্বর
৬। সাধারণ বিজ্ঞান= ১০০ নম্বর
৭। অনার্সে পঠিত বিষয়= ২০০ নম্বর

এখন কথা হলো, যারা শুধু জেনারেল বা টেকনিক্যাল ক্যাডারের জন্য পরীক্ষা দিবেন, তাঁরা ৯০০ নম্বরের পরীক্ষা দিবেন এবং ৪৫০ নম্বর পেলেই ভাইভার জন্য নির্বাচিত হবেন। কিন্তু বোথ ক্যাডারদের তো ১১০০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে সেক্ষেত্রে তাদের পাস মার্ক কত হবে?

বোথ ক্যাডারের ক্ষেত্রে প্রথমে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর ৯০০ নম্বর বিবেচনায় নেয়া হবে। এই ৯০০ নম্বরের মধ্যে প্রার্থী যদি ৪৫০ পান, তাহলে তিনি জেনারেল ক্যাডারের ভাইভার জন্য নির্বাচিত হবেন।

১। বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র (১০০+১০০)= ২০০ নম্বর
২। ইংরেজী প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র (১০০+১০০)= ২০০ নম্বর
৩। বাংলাদেশ বিষয়াবলী প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র (১০০+১০০)= ২০০ নম্বর
৪। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী= ১০০ নম্বর
৫। গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা (৫০+৫০)= ১০০ নম্বর
৬। সাধারণ বিজ্ঞান= ১০০ নম্বর

এরপর উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলোর মধ্যে থেকে বাংলা ২য় পত্র এবং সাধারণ বিজ্ঞানের মোট ২০০ নম্বর বাদ দিন। এর পরিবর্তে অনার্সে পঠিত বিষয়ের ২০০ নম্বর যোগ করুন। এবার নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর ৯০০ নম্বরের মধ্যে প্রার্থী যদি ৪৫০ পান, তাহলে তিনি টেকনিক্যাল ক্যাডারের ভাইভার জন্য নির্বাচিত হবেন।

১। বাংলা প্রথম পত্র= ১০০ নম্বর
২। ইংরেজী প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র (১০০+১০০)= ২০০ নম্বর
৩। বাংলাদেশ বিষয়াবলী প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র (১০০+১০০)= ২০০ নম্বর
৪। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী= ১০০ নম্বর
৫। গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা (৫০+৫০)= ১০০ নম্বর
৬। অনার্সে পঠিত বিষয়= ২০০ নম্বর

এভাবে তিনি একই সাথে জেনারেল ক্যাডার এবং টেকনিক্যাল ক্যাডারে ভাইভার জন্য নির্বাচিত হোন তখন আমরা বলি তিনি বোথ ক্যাডারে পাস করেছেন। বোথ ক্যাডারে অ্যাপ্লাই করে টেকনিক্যাল পরীক্ষায় ফেল করলেও আপনার মোট নম্বর যদি ৫৫০ হয় তাহলে আপনি বোথ ক্যাডারেই পাস করবেন। আর ৪৫০ এর উপর হলে শুধু জেনারেল ক্যাডারে পাস করবেন। এভাবে বোথ ক্যাডারে এপ্লাই করে শুধু টেকনিক্যাল ক্যাডারেও পাস আসতে পারে। তবে মনে রাখবেন, সব পরীক্ষায় আপনাকে উপস্থিতি নিশ্চিত করতেই হবে।

লিখিত পরীক্ষার জন্য কোচিং করতেই হবে এমন কোন কথা কোথাও লেখা নাই। আমার অভিজ্ঞতা বলে, কোচিং না করে ক্যাডার হওয়ার সংখ্যাই বেশি। তাছাড়া বিসিএসে এমন কিছু আসেনা যা আপনি গাইড বই পড়েও বুঝবেন না। হ্যাঁ, মানলাম সবকিছু বুঝা যাবে না। সবকিছু বুঝারও তো দরকার নাই। তারপরেও যদি মনে হয় কোচিং না করলে আপনার মানসিক শান্তি আসবেনা, তাহলে কোচিং করতে পারেন।

প্রিলি পরীক্ষায় কালো বলপয়েন্ট কলম ছাড়া অন্য কোন কলম ব্যবহার না করা গেলেও লিখিত পরীক্ষায় কালোর পাশাপাশি সবুজ ও নীল কালির কলম ব্যবহার করতে পারবেন।

প্রিলির মতো রিটেন পরীক্ষার জন্যও সিলেবাস আছে। পিএসসি ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে নিবেন। সিলেবাসেই বলা আছে কোন কোন টপিক থেকে প্রশ্ন করা হবে। তাছাড়া বিগত বছরের রিটেন পরীক্ষার প্রশ্ন দেখলেও বিষয়টা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।

সৈকত তালুকদার
৩৬ তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Related posts

error: Content is protected !!